ছবির এই মানুষটি আমার স্কুল জীবনের একজন প্রিয় বন্ধু- কল্লোল কুমার ঘোষ ঝুকু। সর্বদা হাসি মাখা মূখ ও আন্তরিক আলাপচারিতায় সবাই কে সে মুুগ্ধ করেছে।
অত্যান্ত পরিশ্রমী ও যাদুকরি ফুটবল কৌশল রপ্ত করে সে স্কুল জীবন থেকেই সে (১৯৯০-২০০৩) মাগুরা জেলা দল থেকে জাতীয় ফুটবল দলের অপরিহার্য খোলোয়াড় স্বীকৃতি অর্জন করে ছিল। আরামবাগসহ ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে নিয়মিত ফুটবল খেলেছেন। নিজ জেলা মাগুরায় তার ফুটবল শৈলি দিয়ে নিজস্ব ভক্ত তৈরি করেছে অসংখ্য।
বন্ধু ঝুকুর অনুরোধে তার সংঙ্গী হিসাবে মাগুরা জেলা ফুটবল দলের সাথে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, রাজবাড়ীসহ অনেক মাঠের লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলা দেখতে গিয়েছি। সে সময় ওর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল চমৎকার।
পারিবারিক, ব্যাক্তি জীবনের কর্মব্যস্ততায় ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী নিজ বাড়ীর পাশেই নতুন বাজার চার রাস্তার মোড়ে জমজমাট ওষুধের ব্যবসায় নিজে কে ব্যস্ত রাখতো। এর মধ্যেও সময় পেলে বন্ধুদের ক্লাব ও স্টেডিয়ামের আড্ডায় যোগ দিতে ভুল করেনি।
এরপর যখন নতুন বাজার গিয়েছি, তখনই ওর সাথে কথা হয়েছে-অনেক সময় চা খেয়েছি এক সাথে। নানা সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
হঠাৎ জুলাই মাসের ৮ তারিখে ঝুকু বৌদি ফোনে জানালেন আমার বন্ধু করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। সে আমাকে জানাতে বলেছে এবং দোয়া চেয়েছে। সংঙ্গে সংঙ্গে আমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সকল বন্ধুর কাছে ওর জন্য দোয়া প্রার্থনা করি।
সর্ব শেষ মাগুরা ৯৩ বন্ধুদের নিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দোয়া করা হয়। আর ঐ রাতেই ১২টা ১৫মিনিটে তুই সবাইকে ছেড়ে- না ফেরার দেশে চলে গেলি।
তোর শূন্যতা পূরণ হবার নয়। ফেসবুকে তোর চলে যাওয়ার খবর দেখে নিজের আবেক ধরে রাখতে পারিনি।মনোবল হারিয়ে প্রেসক্লাবে নিজ কক্ষে যখন তোর সৃতি লিখার চেষ্টা করেছি- তখন দু-চোখ দিয়ে অঝরেবৃষ্টি পড়েছে। ভাবলাম এটায় মনে হয় বন্ধুত্ব।
পেশাগত কারনে প্রতিদিন অনেক মৃত্যুসহ খারাপ খবর শুনতে ও লিখতে লিখতে নিজেকে সাহসি ও শক্ত মনের মানুষ ভাবি- তার পরও এতটায় মানুষিক দূর্বলতা কাজ করেছে, তোর বাড়িতে যেয়ে বৌদির মূখো মূখি নিজেকে দাড় করাতে পারিনি। তবে মনের সাথে যুদ্ধ করে অন্য বন্ধুদের সাথে নিজেকে সামলে সাতদোয়া শ্বশানে তোকে চির বিদায় জানিয়েছি। আমি বা আমরা তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। ক্ষমা করিস. ভাল থাকিস।
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন পরপারে তোকে ভাল রাখেন, আর তোর স্ত্রী সন্তান কে হেফাজত করেন। আমিন।